ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উঁকি দিচ্ছে বড় সংঘাতের শঙ্কা

আপলোড সময় : ০২-০৮-২০২৩ ০৭:৩৩:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০২-০৮-২০২৩ ০৭:৩৩:২৭ অপরাহ্ন
উঁকি দিচ্ছে বড় সংঘাতের শঙ্কা এম,এ,কাশেম পাপ্পু

চেনা চিত্রই বার বার ফিরে আসছে রাজনীতির ময়দানে। বিরোধী দলগুলো উজ্জীবিত। সরকারি দল সতর্ক। কখনো কঠোর আবার কখনো নমনীয় বার্তা দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা। নির্বাচনের কয়েক মাস সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে অন্য এক আবহ। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার দলগুলো প্রায় একমঞ্চে। যারা একজোট হননি তাদেরও সুর, দাবি একই। সরকারের পদত্যাগ চাইছে সবাই। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন তাদের অভিন্ন দাবি। আর দাবি পূরণে একের পর এক কর্মসূচি আসছে।

 
 
 
সামনের দিনগুলো কর্মসূচিময় হবে- এমন আভাসও দিচ্ছে দলগুলো। কিন্তু বিরোধীদের এই ‘ঠাণ্ডা’ ও ‘নরম’ কর্মসূচিতে কি সরকার সাড়া দেবে? মিলিয়ন ডলারের এই প্রশ্ন খোদ আন্দোলনকারী দলগুলোর ভেতরেও উঠতে শুরু করেছে। এমন প্রশ্ন সামনে রেখে সামনের দিনে কর্মসূচিতে ভিন্নতা ও নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছে দলগুলো। বিরোধীদের আন্দোলন, সরকারের অবস্থানে গোটা বিশ্বের চোখ। 

 

সংঘাত সহিংসতা এড়াতে সতর্ক বিরোধী দলগুলো।  কৌশলী সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দলগুলোর মাঝেও চলছে কৌশলের খেলা। কর্মসূচির গুগলিতে একে অপরকে বোল্ড আউট করার চেষ্টা। বার বার সংঘাতের আলামত সামনে আসছে। উঁকি দিচ্ছে বড় সংঘাতের শঙ্কা। এমন অবস্থায় রাজনীতি বোদ্ধারা বলছেন, সরকারি ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজনীতির আসল চিত্র নাও হতে পারে। পর্দার অন্তরালে কী ঘটছে এটিই এখন বড় বিষয়। 

 

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলনের সাত মাস চলছে। এ পর্যায়ে এসে দলগুলো বলছে এখন দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। সামনে হয়তো চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মসূচি আসবে। গত শুক্রবার ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করে বিএনপি। পরের দিন ঢাকার চার প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। হামলা, সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ঢাকাসহ সারা দেশে জনসমাবেশ করেছে দলটি। এরপর আর নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। বলা হচ্ছে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে। 

 

এতদিন রাজনীতির মাঠে রহস্য হয়ে থাকা জামায়াতে ইসলামী ফের সরব হয়েছে রাজনীতির মাঠে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে মিছিল কর্মসূচি করেছে। ঢাকায় ১০ই জুন প্রায় এক দশক পর প্রকাশ্যে সমাবেশ করে দলটি। এই সমাবেশ নতুন আলোচনার খোরাক যোগায়। শান্তিপূর্ণভাবে ওই দিনের সমাবেশ হলেও এখন ‘নাশকতার’ আশঙ্কায় আর সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে না দলটি। ধর্মীয় রাজনীতির মাঠে বহুদিন ধরে আলোচনায় থাকা চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন এবার জোরালো দাবি তুলেছে সরকারের পদত্যাগের। জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে দলটি। টানা তিন মেয়াদে সংসদে এবং বাইরে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসা জাতীয় পার্টির অবস্থান বরাবরই কচুপাতায় রাখা টলমলে পানির মতো। কোন দিকে গড়ায় তা বলা মুশকিল। তবে মাঠের হাওয়া বুঝে নেতারা এবার গরম বক্তব্য দিচ্ছেন। এও বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ঘরে ঢুকে কোরবানি করে দিয়েছে। কোরবানি  দেয়া দলটির দিকে জাপা আবার গলা বাড়াবে কিনা এটিও এখন বড় প্রশ্ন। মাঠের রাজনীতির জটিল হিসাবনিকাশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। দলীয় কর্মসূচি দিয়ে বিরোধীদের ঠেকানোর কৌশলে সফল সরকারি দল কূটনৈতিক চাপ সামলাতে পেরেশান।

 

 বলা হচ্ছে, দৃশ্যমান রাজনীতিতে বৈরী পরিবেশ থাকলেও অন্তরালে সমঝোতা, আপসের চেষ্টা হচ্ছে নানা পক্ষ থেকে। বার্তার আদান প্রদান হচ্ছে। কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট বার্তা নিয়েই তারা দলগুলোর কাছে যাচ্ছেন। সামনের দিনগুলোতে হয়তো সমাধানের কোনো রাস্তা বের হয়ে আসতে পারে তাদের চেষ্টায়। গত কয়েকদিনের ঘটনাও নানা বার্তা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার ঢাকা সফরের পর নানা আলোচনা হয়েছে ওই সফর নিয়ে। কয়েক দিনের বিরতির পর সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বৈঠককে অনেকে বার্তাবহ হিসেবে দেখছেন। মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মার্কিন দূত। ওই বৈঠকের পর সিইসি’র বক্তব্যকেও ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ। মার্কিন দূতকে সিইসি জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন। কাজী হাবিবুল আউয়াল আগে বহু বার সংলাপের কথা বলেছেন। তবে মাঝে কিছুদিন তার অবস্থান নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্নও তুলেছিলেন। এবার আবার তার মুখ থেকেই সংলাপের কথা এসেছে। সোমবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সিইসি’র আকস্মিক  বৈঠক নিয়েও কেউ কেউ নানা আলোচনা করেছেন। 

 

ঢাকা-১৭ আসনের উপ- নির্বাচনের দিন ওই আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিবৃতি দেয়া ১৩ দেশের দূতদের তলবের ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা আছে কূটনৈতিক অঙ্গনে। খবর বেরিয়েছে তলবে দূতরা উচ্চকণ্ঠে তাদের অবস্থানের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তলবের ঘটনার পর অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার এই দূতদের কয়েকজনকে নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের ডিনার পার্টিও আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। 

পশ্চিমা দূতদের দৌড়ঝাঁপের মধ্যে চীনের এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত দেং শি জুন-এর নীরব ঢাকা সফর নিয়েও কূটনৈতিক পাড়ায় ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দেয়। সোমবার দিনভর ঢাকায় ব্যস্ত কর্মসূচিতে কাটিয়েছেন তিনি। আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে। বলা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার জন্য তার ঢাকা সফর। তবে সফরের গোপনীয়তা দেখে অনেকের ধারণা, রুটিন আলোচনার সঙ্গে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও চীনা দূত আলোচনা করে থাকতে পারেন। 
সর্বশেষ ঢাকায় বড় সমাবেশের পর বিএনপি বড় কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি। বলা হচ্ছে দেখেশুনে সামনের কর্মসূচি দেয়া হবে। গতকাল দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সামনের কর্মসূচির প্রশ্নে অনেকটা হাসিমুখে জানান, কর্মসূচি তো আসবেই। তাড়াহুড়োর কী আছে। লক্ষ্য পূরণ হলেই তো হলো। 

 

মঙ্গলবার ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা থাকলেও সমাবেশের নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে তা স্থগিত করে জামায়াত। দলটি জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় তারা। এই সমাবেশের জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে দলটির তরফে। বিরোধী দলগুলোর একের পর এক কর্মসূচির মধ্যে বুধবার রংপুরে সমাবেশে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুরের সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নতুন কোনো বার্তা দেন কিনা এটি এখন দেখার বিষয়।

 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ